Disable Preloader

Blog Details

স্রষ্টা তার সৃষ্টিকে পরীক্ষা করেন। পরীক্ষা করেন কে তাঁর নির্দেশ মান্য করে আর কে তাঁর অবাধ্য। তিনি যেভাবে চান সেভাবে পরীক্ষা করেন। এক সৃষ্টিকে অন্য সৃষ্টির সাথে সংযুক্ত করে তিনি এ পরীক্ষার ক্ষেত্রে সৃষ্টি করেন।

মানুষের পৃথিবীতে অবস্থান এ পরীক্ষার জন্যই[১]। আল্লাহর অনুসারীদের এবং সীমালঙ্ঘণকারীদের নির্ণয়স্বরূপ তিনি এ পরীক্ষার ক্ষেত্রকে তৈরি করেছেন অনেক সত্তা সমন্বয়ে। তারমধ্যে অন্যতম হল শয়তান, যারা জিন জাতিভুক্ত। যাদের ক্ষমতা-শক্তি মানুষের থেকে ভিন্ন। মানুষ যখন আল্লাহ থেকে দূরে সরে যায় তখন তারা মানুষের উপর প্রভাব রাখতে পারে। ভুল কাজকে মানুষের সামনে সঠিক করে তুলতে পারে। এভাবে ধীরে ধীরে মানুষকে পথভ্রষ্ট করে তাদের দলভুক্ত করে নেয়। ফলশ্রুতি উভয়ের জাহান্নাম। আর যখন মানুষ আল্লাহর নির্দেশ মেলে চলে, সকল কাজে আল্লাহর কাছে শয়তানের বিপক্ষে আশ্রয় চায়, আল্লাহ তাকে সথিক পথে অবিচল রাখেন। পরীক্ষাতে শয়তান ক্ষতিগ্রস্ত আর মানুষ জান্নাতপ্রাপ্ত হয়।

এই পরীক্ষার উপকরণের মধ্যে সৃষ্টি থেকে কেয়ামত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াভহ হল মাসীহ দাজ্জাল। যার ব্যাপারে সকল নবী তার উম্মতকে সতর্ক করেছেন।

মাসীহ দাজ্জাল কে?

মাসীহ দাজ্জাল (المسيح الدجل) দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। প্রথম শব্দ মাসীহ, আরবি মাসাহা (مَسَحَ) থেকে নির্গত। যার ভাবার্থ আশীর্বাদ প্রাপ্ত। আর দাজ্জাল শব্দের অর্থ ধোঁকাবাজ, প্রতারক। একত্রে মাসীহ দাজ্জাল অর্থ দাড়ায় – আশীর্বাদ প্রাপ্ত ধোঁকাবাজ।

মূলত দাজ্জাল হবে শয়তানের[২] আশীর্বাদ প্রাপ্ত। আল্লাহ শয়তানকে এ সময়ে এমন ক্ষমতা দিবেন যা পুরো সৃষ্টির ইতিহাসে শুধুমাত্র ফেরেশতাদের হাতে ছিল। যেমনঃ আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ, ফসল উৎপাদন ইত্যাদি।

শয়তান তখন এ ক্ষমতার দ্বারা পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি প্রেরণ করবে যে মানুষকে প্রতারিত করবে, নিজেকে প্রথমে নবী পরে স্রষ্টা বলে দাবি করে[৩] মানুষকে তার অনুসারি করবে।

তাহলে মাসীহ দাজ্জাল এই ব্যপারটাতে মূলত দুটি জিনিসের সমন্বয় রয়েছে – প্রথমত. শয়তানের দাজ্জাল রুপ অর্থাৎ শয়তানের প্রতারনা করার ক্ষমতা এবং দ্বিতীয়ত. শয়তানের মানব প্রতিনিধি মাসীহ দাজ্জালের মাধ্যমে মানুষের সাথে প্রতারণা।

মাসীহ দাজ্জালের বৈশিষ্ট্য?

মাসীহ দাজ্জাল হবে আদম সন্তানের মধ্য থেকে শয়তানের মাসায়হ প্রাপ্ত ব্যক্তি। তার সম্পর্কে সতর্ক করতে রাসুল (সঃ) তার বৈশিষ্ট্যসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন যাতে ঈমানদাররা তাকে চিনতে পারে এবং তার দ্বারা প্রতারিত না হয়।

সে বয়সে একজন যুবক হবে, গায়ের রং সাদা লালচে হবে। লম্বায় খাটো হবে। ঘন কোঁকড়ানো চুল এবং চওড়া কপালযুক্ত হবে। বুকের উপরের ভাগ প্রশস্ত হবে। ডান চোখ অন্ধের মত ত্রুটিযুক্ত হবে যা দেখতে ভাসমান আঙুরের মত লাগবে। দুই চোখের মাঝখানে তার কাফের হওয়া চিহ্নিত থাকবে – যা আল্লাহর উপরে বিশ্বাস রাখে শিক্ষিত, অশিক্ষিত সকলেই বুঝতে পারবে।

সে বন্ধ্যা হবে। তার কোন সন্তান-সন্ততি থাকবে না।

মাসীহ দাজ্জালের বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হাদিসসমূহ 

১. ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি একবার ঘুমিয়ে ছিলাম। তখন আমি আমাকে কা‘বা গৃহ তাওয়াফরত অবস্থায় দেখতে পেলাম। এমন সময় সোজা চুলওয়ালা একজন পুরুষকে দু’জন পুরুষের মাঝে দেখলাম, যার মাথা থেকে পানি ঝরছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তারা বলল, ইবনু মারইয়াম। এরপর আমি ফিরে আসতে লাগলাম। এ সময় একজন লাল রঙের মোটাসোটা, কোঁকড়ান চুলওয়ালা, ডানচোখ কানা ব্যক্তিকে দেখলাম। তার চোখটি যেন ভাসমান আঙুর। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ ব্যক্তি কে? তারা বলল, এ হচ্ছে দাজ্জাল। তার সঙ্গে সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ লোক হল ইবনু কাতান। আর ইবনু কাতান হল বনূ মুস্তালিক গোত্রের খুযাআ বংশের একজন লোক। [সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), হাদিস নং ৭০২৬]

২. ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের মাঝে দাজ্জালের আলোচনা করে বললেন, আল্লাহ তা’আলা কানা নন। শোন! দাজ্জালের ডান (চোখ) কানা হবে। তার চোখ যেন আঙ্গুরের ন্যায় ফোলা হবে। [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭০৯৫]

৩. নাওয়াস ইবনু সামআন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাজ্জাল যুবক এবং কোঁকড়া চুল বিশিষ্ট হবে। তার চক্ষু হবে স্ফীত আঙ্গুরের ন্যায়। আমি তাকে কাফির আবদুল উযযা ইবনু কুতনের সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করছি। [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭১০৬]

৪. উবাদা ইব্‌ন সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের কাছে দাজ্জাল সম্পর্কে অনেক হাদীছ বর্ণনা করেছি, এতসত্ত্বেও আমার ভয় হয়, তোমরা তাকে চিনতে পারবে না। (জেনে রাখ!) মাসীহ্‌ দাজ্জাল হবে বেঁটে, তার পদক্ষেপ হবে দীর্ঘ, মাথার চুল হবে কুঞ্চিত, আর সে হবে কানা। তার চোখ হবে সমতল, যা উপরে উঠে থাকবে না এবং নীচে থাকবে না। এরপরও যদি তোমরা সন্দীহান হও, তবে জেনে রাখ! তোমাদের রব কানা নন। [সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৪২৬৯]

৫. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মিথ্যা মসীহ – সে হবে একচোখা, কপাল থাকবে চওড়া এবং বুকের উপরেরভাগ হবে প্রশস্ত। সে ন্যুব্জ দেহী হবে। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ৭৫৬৪]

৬. হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাজ্জালের বাম চোখ কানা হবে। (তার দেহে) ঘন চুল হবে। [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭১০০]

৭. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন কোন নবী প্রেরিত হন নাই যিনি তার উম্মতকে এই কানা মিথ্যুক সম্পর্কে সতর্ক করেননি। জেনে রেখো, সে কিন্তু কানা, আর তোমাদের রব কানা নন। আর তার দুই চোখের মাঝখানে কাফের শব্দটি লিপিবদ্ধ থাকবে। [সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৬৬৪৬] অন্য এক বর্ণনাতে রয়েছে – দাজ্জালের দু’ চোখের মধ্যস্থলেك ف ر অর্থাৎ كافر (কাফির) লেখা থাকবে। [সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), হাদিস নং ৭২৫৩]  হুযায়ফা (রাঃ) এর বর্ণনা অনুযায়ী শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকল মুমিন ব্যক্তি তা পড়তে পারবে। [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭১০১] 

৮. দাজ্জালের কোনো সন্তান হবে না, যেমনটি আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) এর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যিনি তার এবং ইবনে সায়াদের মধ্যে যা ঘটেছিল তা বর্ণনা করেছেন, যিনি তাকে বলেছিলেন: “তুমি কি শোননি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তার কোন সন্তান হবে না? …” আবু সাঈদ বলেন, ‘আমি বললাম, হ্যাঁ …’” [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭০৮৪] 

উপরের হাদিসগুলো থেকে লক্ষ্য করা যায় বেশিরভাগ তার ডান চোখ অন্ধ বা ত্রুটিযুক্ত হবে বলেছে আবার কোন কোন বর্ণনাতে তার বাম চোখকে অন্ধ বা ত্রুটিযুক্ত বলা হয়েছে। উভয় বর্ণনাই সহিহ। কিছু আলেম এই বর্ণনাগুলো একত্রিত করেছেন। কাদি আইয়াদ বলেছেনঃ “দাজ্জালের উভয় চোখই ত্রুটিপূর্ণ হবে। তার ডান চোখ হবে ক্ষতবিক্ষত (ممسوحة) এবং নিস্তেজ, দেখতে অক্ষম, যেমনটি ইবনে উমরের হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আর বাম চোখ এমন হবে যেটি চামড়ার মোটা ভাঁজে ঢাকা থাকবে এবং এটিও ত্রুটিযুক্ত হবে।” সুতারং তার বাম এবং ডান উভয় চোখেই ত্রুটি থাকবে। কারণ হাদিসে ব্যবহৃত আরবি শব্দ (أعْوَرٌ) ত্রুটিযুক্ত যেকোন কিছুকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয় এবং বিশেষকরে চোখ দুর্বল হলে তা বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। মোটকথা তার একচোখ অকার্যকর এবং অন্যটি ত্রুটিযুক্ত হবে।

কোন জায়গা থেকে মাসীহ দাজ্জালের আবির্ভাব হবে?

দাজ্জাল বের হবে ইহুদিদের মধ্য থেকে। তার অধিকাংশ অনুসারী হবে ইহুদী[৪]। তার আবির্ভাবের ব্যাপারে হাদিসে মক্কার পূর্বদিকে অবস্থিত বর্তমান ইরানের (অতীত খোরাসান) ইহুদি জনবহুল ইস্ফাহান শহরের কথা বলা হয়েছে[৫]।

আবার দাজ্জাল নিয়ে সাহাবি ফাতেমা বিনতে কায়েস (রাঃ) বর্ণিত দীর্ঘ হাদিসে রাসুল (সঃ) তার অবস্থানের ব্যপারে বলেছেন – “সে সিরিয়া সাগরে অথবা ইয়ামান সাগরে না বরং পূর্বদিকে রয়েছে, পূর্বদিকে রয়েছে, পূর্বদিকে রয়েছে। এসময় তিনি তার হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারাও করলেন।”[৬]

এখানে বর্ণিত সিরিয়া সাগর মক্কার উত্তর দিকে, ইয়েমেন সাগর দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। কিন্তু পূর্ব দিকের কোন সাগর তিনি উল্লেখ করেননি অথচ বার বার পূর্ব দিকের কথা বলেছেন।

এ বর্নাগুলোর সমন্বয়ে বলা যায় সে কোন জায়গা থেকে পৃথিবীতে প্রকাশ ঘটাবে হবে তা নির্দিষ্ট নয় কিন্তু তার আবির্ভাবের সাথে ইরানের ইস্পাহান শহর এবং ইহুদিদের সম্পৃক্ততা থাকবে।

ইরানের ইস্পাহান শহর আদি যুগ থেকে ইহুদিদের আবাসস্থল। ৭২৭ খ্রিষ্টপূর্ব হতে দফায় দফায় অ্যাসিরিয়ান এবং ব্যাবিলনীয় রাজারা তাদেরকে জেরুজালেম হতে বন্দী করে দাস হিসাবে সেখানে নিয়ে আসত[৭]। ধীরে ধীরে তারা পার্সিয়ান সভ্যতা এবং সংস্কৃতির সাথে মিলে যায়।

১৯৪৮ সালে ইরানে ইহুদিদের সংখ্যা ছিল ১৫০০০০[৭]। ইসরাইল রাষ্ট্র গঠিত হবার পর এই সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। ইস্ফাহান সহ ইরানের ইহুদিরা ইসরাইলে পাড়ি জমাতে থাকে আর ইরানে ইহুদিদের সংখ্যা কমতে থাকে। বর্তমানে ইসরাইলে ইরানি ইহুদির সংখ্যা ২৫০০০০[৮] আর ইরানে মাত্র ৮৫০০[৭]।

বর্তমানযুগে ইহুদি অর্থই ইসরাইল। এছাড়া হাদিসেও দাজ্জালকে হত্যার কথা বলা হয়েছে “লুদ” [৯] শহরে, যেটা ইসরাইলেরই অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর।

পৃথিবী শেষ জামানাতে অবস্থান করছে। রাসুল (সঃ) থেকে বর্ণিত কেয়ামতের ছোট আলামতগুলোর প্রায় সবই প্রকাশ পেয়েছে। ধীরে ধীরে বড় আলামতগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করবে। আর বড় আলামতগুলোর অন্যতম হল দাজ্জালের বহিঃপ্রকাশ। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সব মিলিয়ে বলা যায় পৃথিবীতে তার প্রকাশ ঘটবে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল থেকে। ইসারাইলে বসবাসরত ইস্পাহানী ইহুদিদের মধ্য থেকে তার আবির্ভাব হবে এবং সে দেশের ইহুদিরাই হবে তার মূল অনুসারী।

দাজ্জালের সময়কাল

হাদিসে দাজ্জালের পৃথিবীতে অবস্থানকাল নির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে ৪০ দিন। কিন্তু শুরুর দিকে ১ দিন মানুষের গননায় ১ দিনের মত নয় বরং তা বছরের মত দীর্ঘ, এরপরের ১ দিন মানুষের গননায় মাসের মত দীর্ঘ, এরপরের ১ দিন সপ্তাহের মত দীর্ঘ। বাকি দিনগুলো মানুষের গননানুযায়ী হবে[১০]।

প্রথমদিকের সময়কালের দীর্ঘতা বুঝাতে রাসুল (সঃ) সেই একদিনে মানুষের গণনাতে ১ দিনের সালাতের হিসাব নয় বরং তার গননানুযায়ী সালাতের হিসাবের কথা বলেছেন[১০]। অর্থাৎ দাজ্জালের সে একদিন মানুষের গণনাতে যদি ৫০ বছরের সমান হয় তাহলে সালাতের হিসাব হবে সে ৫০ বছরের।

মাসীহ দাজ্জাল আবির্ভাবের প্রসেসে প্রথমে মুক্তি ঘটবে বন্দী শয়তান দাজ্জালের। সে তখন পৃথিবীতে চলে আসবে। পৃথিবীতে তার অবস্থান দীর্ঘকাল বছরের পর বছর হবে। আস্তে আস্তে তা কমতে শুরু করবে এবং এক পর্যায়ে সে তার মানব প্রতিনিধিকে মাসায়াহ দিয়ে পৃথিবীতে বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে। এই মাসীহ দাজ্জাল পৃথিবীতে চলে আসার পর বাকি দিনগুলো পৃথিবীর গননানুযায়ী হবে।

দাজ্জালের ফিতনাসমূহ

আদম (আঃ) কে সৃষ্টির পর থেকে নিয়ে কেয়ামত পর্যন্ত দাজ্জালের ফিতনাই হবে সবথেকে বড় ফিতনা। কারণ তাকে যে অলৌকিকতা দেয়া হবে তা দিয়ে সে মানুষকে মুগ্ধ করবে।

তার কাছে জান্নাত ও জাহান্নাম থাকবে। কিন্তু তার জান্নাত আসল জাহান্নাম এবং জাহান্নাম আসল জান্নাতের অংশ। তার কাছে থাকবে নদীভর্তি পানি, পাহাড় সমপরিমান রুটি। সে আকাশকে আদেশ দিবে বৃষ্টি বর্ষণের, তখন বৃষ্টি হবে। পৃথিবীকে আদেশ দিবে ফল-মূল, শাক-সবজি, ফসলাদির, সে তা করবে। পৃথিবীর ধন-সম্পদ তাকে অনুসরন করবে। বাতাস যেভাবে মেঘকে বেগে চালিত করে সেভাবে সে দ্রুত একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাত্রা করবে। এভাবে সে অন্যান্য অলৌকিক, বিস্ময়কর কাজ করবে। এর সবই সহিহ হাদিসে রয়েছে যা নিচে উল্লেখিত হল।

১. হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাজ্জালের সাথে জান্নাত ও জাহান্নাম থাকবে। (মুলতঃ) তার জাহান্নাম জান্নাত হবে এবং তার জান্নাত জাহান্নাম হবে। [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭১০০]

২. হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দাজ্জালের সাথে কি থাকবে, এ সম্পর্কে আমি নিশ্চিত অবগত আছি। তার সাথে প্রবাহমান দুটি নহর থাকবে। একটি দৃশ্যত সাদা পানি এবং অপরটি দৃশ্যত লেলিহান অগ্নি মনে হবে। যদি কেউ সুযোগ পায় তবে সে যেন ঐ নহরে প্রবেশ করে যাকে দৃশ্যত আগুন মনে হবে এবং (এই) চক্ষু বন্ধ করতঃ মাথা অবনমিত করে সে যেন তা থেকে পানি পান করে। তা হবে ঠাণ্ডা পানি। [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭১০১]

৩. দাজ্জাল সম্পর্কে নাওয়াস ইবনু সামআন (রাঃ)’র হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, সাহাবাগণ বলেছেন: হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে পৃথিবীতে কত দিন অবস্থান করবে? উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চল্লিশ দিন পর্যন্ত। এর প্রথম দিনটি এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের দিনসমূহের মতই হবে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! যেদিন এক বছরের সমান হবে, উহাতে এক দিনের সালাতই কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? জবাবে তিনি বললেন, না, বরং তোমরা এদিন হিসাবে ঐ দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করে নিবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! দাজ্জাল পৃথিবীতে তার গতির দ্রুততা কেমন হবে? তিনি বললেন, বাতাসে পরিচালিত মেঘের ন্যায়। সে এক সম্প্রদায়ের নিকট এসে তাদেরকে কুফরীর দিকে আহবান করবে। তারা তার উপর ঈমান আনয়ন করবে এবং তার ডাকে সাড়া দিবে। অতঃপর সে আকাশকে হুকুম করবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে এবং ভূমিকে নির্দেশ দিরে, ভূমি গাছ-পালা ও শষ্য উদগত করবে।

এরপর সন্ধ্যায় তাদের গবাদী পশুগুলো পূর্বের তূলনায় অধিক লম্বা, কুঁ’জ, প্রশস্ত স্তন এবং উদরপূর্ণ অবস্থায় তাদের নিকট ফিরে আসবে। অতঃপর দাজ্জাল অপর এক সম্প্রদায়ের নিকট আসবে এবং তাদেরকে কুফুরীর প্রতি আহবান করবে। তারা তার কথাকে উপেক্ষা করবে। ফলে সে তাদের নিকট হতে ফিরে চলে যাবে। অমনি তাদের মাঝে দুর্ভিক্ষ ও পানির অনটন দেখা দিবে এবং তাদের হাতে তাদের ধন-সম্পদ থাকবে না। তখন দাজ্জাল এক পতিত স্থান অতিক্রমকালে উহাকে সম্মোধন করে বলবে, তুমি তোমার গুপ্তধন বের করে দাও। তখন যমীনের ধন-ভাণ্ডার বের হয়ে তার অনুগমন করবে, যেমন মৌমাছি তাদের সর্দারের অনুগমন করে।

Tags: test

Comments
  • Saiful Islam:
    16/03/2024

    testing comment

Leave a Comment